Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

শীতে মাছ চাষে সমস্যা ও প্রতিকার

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ

শীতকালে পুকুরে মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। কারণ পানি দূষিত হয়, অক্সিজেন কমে যায়, গ্যাস সৃষ্টি হওয়াসহ নানা সমস্যার জন্য মাছের বিভিন্ন রোগ ও মড়ক দেখা যায়। ফলে মাছের উৎপাদন কমে যায়। এসব সমস্যা হওয়ার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
 

১. খাবি খাওয়া : অক্সিজেনের অভাবে মাছ পানিতে খাবি খায়। পানির ওপর ভেসে ওঠে। মাছ খুব ক্লান্ত হয়, মুখ খুলে থাকে ও ফুলকা ফাটে। মাছ মারা যায়।
প্রতিকার : পানিতে সাঁতারকাটা, বাঁশ দিয়ে পানির ওপর পেটানো, হররা টেনে তলের গ্যাস বের করে দেয়া, পুকুরে পাম্প বসিয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি করা। নতুন পানি সরবরাহ করেও অক্সিজেন বাড়ানো যায়। প্রতি শতাংশে   ১ কেজি চুন ও প্রতি শতাংশে ২-২.৫ গ্রাম কৃত্রিম অক্সিজেন দেয়া যেতে পারে।
২. কার্বন-ডাই-অক্সাইডজনিত পানি দূষণ :  পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে গেলে মাছের দেহে বিষক্রিয়া হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়।
প্রতিকার :  খাবি খাওয়া প্রতিকারের মতো। তবে মাছ ছাড়ার আগে পুকুর তৈরির সময় অতিরিক্ত কাদা সরাতে হবে। উদ্ভিদ কণা বাড়াতে হবে।
৩. অ্যামোনিয়াজনিত সমস্যা :  অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রঙ তামাটে অথবা কালচে রঙের হয়। মাছের ছোটাছুটি বেড়ে যায়। মাছ মারা যায়।
প্রতিকার :  মাছের মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে। সার ও খাদ্য প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ২০০-২৫০ গ্রাম জিওলাইট দিতে হয়। প্রতি শতাংশে ১-২ কেজি লবণ দিতে হয়।
৪. নাইট্রোজেনজনিত সমস্যা :  নাইট্রাইটের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাছের দেহে অক্সিজেন সঞ্চালন বাধা প্রদান করে। বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। এতে মাছের দেহ বাদামি রঙ ধারণ করে। মাছ খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
প্রতিকার :  মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে ২৫০ মিলিগ্রাম/ লিটার হারে লবণ দিতে হবে।
৫. পিএইচজনিত সমস্যা :  পানিতে পিএইচ বা অ¤øমান কমে গেলে মাছের দেহ থেকে প্রচুর পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। মাছ খাদ্য কম খায়। পিএইচ বেশি হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। দেহ খসখসে হয়। মাছ রোগাক্রান্ত হয়।  
প্রতিকার :  পিএইচ কম হলে চুন, ডলোমাইট বা জিপসাম ১ থেকে ২ কেজি/শতাংশ প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ বেশি হলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডাল তিন-চার দিন ভিজিয়ে রেখে পরে তুলে ফেলতে হবে। তেঁতুল পানিতে গুলে দেয়া যেতে পারে।
৬. পানির ওপর সবুজ স্তর :  পুকুরের পানির রঙ ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা পানির ওপর শ্যাওলা পড়লে খাদ্য ও সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। মাছ খাবি খায়। মাছ মারা যায়।
প্রতিকার :  প্রতি শতাংশে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক ভাগ করে ছোট ছোট পোঁটলায় বেঁধে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানির নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে। শতাংশপ্রতি ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।
৭.পানির ওপর লাল স্তর :  পুকুরের পানির ওপর লাল স্তর পড়লে ধানের খড়ের বিচালি বা কলাগাছের শুকনো পাতা পেঁচিয়ে দড়ি তৈরি করে পানির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিলে পরিষ্কার হয়। প্রতি শতাংশে ১০০ গ্রাম করে  ফিটকিরি ও ইউরিয়া দিতে হয়।  
৮. পানির ঘোলাত্ব :  পানি ঘোলা হলে মাছ খাদ্য কম খায়, চোখে দেখে না, প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না, প্রজননে সমস্যা হয় ও রোগবালাই বেশি হয়।
প্রতিকার :  প্রতি শতাংশে ৮০ থেকে ১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হবে। পুকুর তৈরির সময় জৈবসার বেশি দিলে স্থায়ীভাবে ঘোলা দূর হয়। কলাপাতা ও কুচরিপানা রাখলেও ঘোলা কমে।
৯. পানির ক্ষারত্ব :  পানি ক্ষারীয় হলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি কম হয়। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়।
প্রতিকার :  পুকুর তৈরির সময় ও পরে শতাংশ প্রতি ১ থেকে ২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। এ ছাড়াও ছাই ব্যবহার করলেও পানির ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ থাকে।
১০. রোগবালাই
পানির পরিবেশ খারাপ হলে ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী দ্বারা রোগ হতে পারে। নিচে এগুলো বর্ণনা করা হলো :

 

ফুলকা পচা রোগ ও প্রতিকার
ছত্রাক সংক্রমণে এ রোগ হয়। আক্রান্ত মাছের শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায়। দেহের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়। ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়। ফুলকা পচে ও ফুলে যায়। মাছ দ্রæত মারা যায়। মাছ লাফালাফি করে।
মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথর চুন ৩ মাস পর পর দিতে হবে। জৈবসার ও সম্পূরক খাদ্য কম দিতে হয়। আক্রান্ত মাছ ২০০ পিপিএম লবণ দ্রবণে সপ্তাহে একবার হিসেবে মোট দুইবার গোসল করাতে হবে। অথবা ৫০ পিপিএম ফরমালিনে আক্রান্ত মাছকে ১ ঘণ্টা ডুবিয়ে ছেড়ে দিতে হয়।

 

মাছের উকুন লক্ষণ ও প্রতিকার
আরগুলাস নামক বহিঃপরজীবী দ্বারা মাছ আক্রান্ত হয়। মাছের দেহের রক্ত চুষে ক্ষত সৃষ্টি করে। দেহপৃষ্ঠ ও পাখনায় উকুন লেগে থাকে। শক্ত কিছু পেলে মাছ দেহ ঘষে। মাছ লাফালাফি করে। দেহ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। পরজীবী খালি চোখে দেখা যায়। মাছ ক্লান্তহীনভাবে সাঁতার কাটে। আক্রান্ত স্থানের চারপাশ লালচে বর্ণ হয়।
পুকুর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন দেয়া। জৈবসার প্রয়োগ কমিয়ে দেয়া। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরানো। ডিপটারেক্স (ডাইলকস, নেগুভন, টেগুভন) ০.৫   পিপিএম হারে পুকুরে প্রয়োগ করা। সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার। অথবা, ০.৮ পিপিএম হারে সুমিথিয়ন প্রয়োগ করা। প্রতি সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার। অথবা, ০.২৫ পিপিএম পটাশ দ্রবণে ৫-৬ মিনিট গোসল করাতে হবে।

 

ক্ষতরোগ লক্ষণ ও প্রতিকার
বাংলাদেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির মাছ এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। অঢ়যধহড়সুপবং নামক ছত্রাক সংক্রমণে এ রোগ হয়। পরে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। লাল দাগের স্থানে গভীর ক্ষত হয়। মাছ দ্রæত মারা যায়। চোখ নষ্ট হতে পারে। ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না। ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধ ও পুঁজ বের হয়। মাছ দুর্বল হয় এবং ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। আক্রান্ত বেশি হলে লেজ ও পাখনা পচে খসে পড়ে।

 

প্রতিরোধ ও প্রতিকার
শুকনো মৌসুমে পুকুরের তলা শুকাতে হবে। শীতের শুরুতে প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ একত্রে প্রয়োগ করতে হবে। পোনা মজুদের আগে ২-৩% লবণ পানিতে পোনা গোসল করানো। জৈবসার প্রয়োগ সীমিত করা। জাল রোদে শুকিয়ে পুকুরে ব্যবহার করা। প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৬০-১০০ মি.গ্রা. টেরামাইসিন বা ১ গ্রাম ক্লোরোমাইসিটিন ওষুধ মিশিয়ে পরপর ৭-১০ দিন প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত মাছকে ৫ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ১ ঘণ্টা অথবা ১ পিপিএম তুঁতের দ্রবণে ১০-১৫ মিনিট গোসল করাতে হয়।

 

ড্রপসি/উদরফোলা/শোঁথরোগ লক্ষণ ও প্রতিকার
ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এ রোগ হয়। মাছের পেটে তরল পদার্থ জমে পেট ফুলে যায়। মাছ চিৎ হয়ে ভেসে ওঠে। ভারসাম্যহীন চলাফেরা করে। হলুদ বা সবুজ রঙের পিচ্ছিল তরল পদার্থ বের হয়। দেহের পিচ্ছিল পদার্থ থাকে না। হাত দিয়ে পেট চেপে তরল পদার্থ বের করা। জৈব সার প্রয়োগ করা। চুন প্রয়োগ করা। টেরামাইসিন গ্রæপের ওষুধ খাদ্যের সাথে খাওয়াতে হবে অথবা ইনজেকশন দিতে হবে।
লেজ ও পাখনা পচা রোগ লক্ষণ ও প্রতিকার
অ্যারোমোনাস ও মিক্সো ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এ রোগ হয়। দেহের পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। লেজ ও পাখনায় সাদাটে দাগ দেখা যায়। লেজ ও পাখনায় পচন ধরে। লেজ ও পাখনার পর্দা ছিড়ে যায়। লেজ ও পাখনা খসে পড়ে। রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ও রঙ ফ্যাকাশে হয়। মাছ দেহের ভারসাম্য হারায়। মাছ ঝাঁকুনি দিয়ে চলাফেরা করে। আক্রান্ত স্থানে তুলার মতো ছত্রাক জন্মায়।

 

প্রতিরোধ ও প্রতিকার
পুকুরে জৈবসার প্রয়োগ কমাতে হবে। নিয়মিত হররা বা জাল টেনে পুকুরের তলার বিষাক্ত গ্যাস কমাতে হবে। মজুদকৃত মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা। প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ২৫ মি.গ্রা. টেট্রাসাইক্লিন মিশিয়ে পর পর ৭ দিন দিতে হবে। পোনা মাছে ১ পিপিএম তুঁত দ্রবণে সপ্তাহে ২ দিন চুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে।

 

আঁইশ ওঠা রোগ লক্ষণ ও প্রতিকার
অ্যারোমোনাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়। মাছের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। আঁইশ বাঁকা হয়। সামান্য ঘষা বা আঘাতেই আঁইশ উঠে যায়। লেজ অবস হয়। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না।
পুকুরে জৈবসার প্রয়োগ কমাতে হবে। প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন নিয়মিত প্রয়োগ করা। জাল রোদে শুকিয়ে পুকুরে ব্যবহার করা। এক লিটার পানিতে ২-৩ মিলি গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলিগ্রাম তুঁত মিশিয়ে মাছকে গোসল করালে এ রোগ ভালো হয়। প্রতি কেজি খাদ্যে ১ গ্রাম ক্লোরোমাইসিটিন মিশিয়ে মাছকে কমপক্ষে ৭ দিন খাওয়াতে হবে।


মাছের রোগবালাই প্রতিরোধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তা হলো- ১. পুকুরের পরিবেশ ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা, ২. জলজ আগাছামুক্ত রাখা, ৩. পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করা, ৪. অনাকাক্সিক্ষত জলজ প্রাণী অপসারণ করা, ৫.  অতিরিক্ত কাদা সরানো, ৬. দুই-তিন বছর পর পর পুকুর শুকানো, ৭. চুন প্রয়োগ করা, ৮. মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, ৯. প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা, ১০. হররা টানা, ১১. পাখি বসতে না দেয়া, ১২. জাল শোধন করে ব্যবহার করা, ১৩. রোগাক্রান্ত মাছ অপসারণ করা, ১৪. সব সময় ঢেউয়ের ব্যবস্থা করা। য়

কৃষি প্রাবন্ধিক, সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভ‚ঞাপুর, টাঙ্গাইল,  মোবাইল : ০১৭১১-৯৫৪১৪৩


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon